“ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো মানুষও নাকি ছিলেন অত্যন্ত ভোজন রসিক। যেতেও খাওয়াতে ভালোবাসতেন। তিনি কয়েকজন অন্তরঙ্গ বন্ধুকে নিয়ে ডোজ সভা’ নামে একটি সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন”।
বাংলার সংস্কৃতি,
১২ মাসে ১৩ পার্বণ
হাজার হাজার বছর ধরে নানা নৃতাত্ত্বিক এবং ধর্মীয় গোষ্ঠী, নানা শ্রেণির মিলন, পারস্পরিক প্রভাব এবং সমন্বয়ের ফলে গড়ে উঠেছে বক্সীয় সংস্কৃতি। একটি সংস্কৃতির অসংখ্য উপাদানের মধ্যে রয়েছে মানুষের জীবনাচরণ, বোধ, বিশ্বাস, অভ্যাস, ঐতিহাসিক পরিক্রমার একটি সমন্বিত রূপ। বাঙালি সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে আমরা যা করি, যা ভাবি, যা বলি, যা পরিধান করি, যেভাবে ও ভাষায় কথা বলি, যা খাই এরকম আরো হাজারো বিষয়। আবহমান কাল ধরে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজ এই ভূখণ্ডে যে আচার, বোধ ও অভ্যাস দাঁড়িয়েছে, তাই আজকের বাংলাদেশের সংস্কৃতি। বাঙালি সংস্কৃতি ঐতিহাসিক ভাবে বিভিন্ন পরিবর্তন ও কাল পরিক্রমার মধ্য দিয়ে গিয়েছে, ফলে সংস্কৃতি পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু সকল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েও একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে সমুজ্জ্বল রয়েছে সবসময়।
বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি। প্রতি ঋতুতে, প্রতিটি পরিস্থিতিতে বাঙালি উৎসব পছন্দ করে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বাঙালির গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত জুড়ে উৎসবের শেষ নেই। নবান্ন, মিঠা উৎসব, ফলাহার ইত্যাদির সমারোহে বাঙালির উৎসব মানেই বিবিধ ভোজন। বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শেকড় ধরে টান দিলে দেখা যায়, এ অঞ্চলের খাদ্যাভ্যাস ও রসনা এর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এদেশের মানুষের মনন, রুচিশীলতা, জীবনাচরণ ও দর্শনের পেছনে যেমন খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা রয়েছে, তেমনি এ অঞ্চলের রসনা ও খাবার কালের পরিক্রমায় ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। সুতরাং তারা বিন্দুমাত্র ভুল নয়, যারা বলেছেন, কোনো জাতির খাদ্যাভ্যাস দিয়ে সে জাতির সার্বিক সাংস্কৃতিক রূপরেখা নির্মাণ করা সম্ভব।
রসের গোলক, এত রস কেন তুমি ধরেছিলে হায় ইতালির দেশ ধর্ম ভুলিয়া লুটাইল তব পায়
– সৈয়দ মুজতবা আলী
বাংলাদেশের
খাদ্যসংস্কৃতি
প্রাচীন বাংলা রন্ধনশৈলী ও খাদ্যাভ্যাসের সাথে মধ্যযুগে মিশেছে মোঘল, পারসিক, তুর্কি, আফগানি রসনা ব্যঞ্জনা। এরপর ইউরোপীয় সভ্যতার ফরাসী, পর্তুগীজ, ইংরেজ, ডাচসহ নানা দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও রসনা যোগ হয়েছে এদেশের আহার্যে। প্রকৃত বাংলা রন্ধনশৈলীর সাথে বিবিধ সংমিশ্রণে একটি স্বতন্ত্র খাদ্য সংস্কৃতি দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের স্বাদ সম্ভারে।
ঐতিহাসিক কালের মতোই, আজও দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে আবহমান বাংলার একান্ত নিজস্ব স্বাদ ও গন্ধময় রসনা। আর মানুষের মুখে মুখে, লোককথায় ফেরে সেই সব অকৃত্রিম স্বাদ। এখন সময় এসেছে সেই সব স্বাদ আর রসনার গর্বকে তুলে ধরবার, ছড়িয়ে দেবার।